সংবাদচর্চা রিপোর্টঃ
ভারতের দক্ষিণী চলচ্চিত্রের আলোচিত একটি চরিত্র ‘সিংহাম’। চলমান প্রেক্ষাপট ও পুলিশ প্রশাসনের উপর রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাবের চিত্র এ ছবিতে চিত্রায়িত হয়। সেই ছবির আলোকে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশীদকে ‘বাংলার সিংহাম’ উল্লেখ করে শহরের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে বড় আকৃতির বেশ কয়েকটি ব্যানার টানানো হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ বাসীর সৌজন্যে এই ব্যানারগুলো টনানো হলেও কে বা কারা এসব টানিয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ব্যানারটিতে পুলিশ সুপার মো. হারুন রশীদকে ‘বাংলার সিংহাম’ উল্লেখ করার পাশাপাশি তাঁকে ‘সিংহ পুরুষ’ আখ্যায়িত করে বলা হয়েছে, ‘সিংহ পুরুষ এসপি হারুন অর রশিদ দীর্ঘজীবি হোক’।
রোববার (৫ মে) সকাল থেকে নগরীর চাষাড়া খাজা সুপার মার্কেট এবং খানপুরে একই রকমের ব্যানার লক্ষ করা গেছে। এসব ব্যানার কারা লাগালো, কখন লাগিয়েছে তা কেউই বলতে পারেনি। তবে, এসপিকে নিয়ে টানানো ব্যানারগুলো সাধারণ মানুষজনের মাঝে বেশ আলোচনা তৈরি করেছে।
অন্যদিকে নাম না প্রকাশ করার শর্তে জনৈক ব্যক্তি জানিয়েছেন, শনিবার রাত ১১ টার দিকে চাষাড়া রাইফেল ক্লাবের শ্যূটার ইমরুল কায়েসসহ একই ক্লাবের আরও অনেকে উপস্থিত থেকে এই ব্যানার টানিয়েছেন। এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেল পুলিশের ইতিহাসে এবারই প্রথম কোনো পুলিশ সুপারের প্রশসংসা করে এমন ব্যানার টানানো হয়েছে। এর পূর্বে তথা ৯০ দশকের মাঝামঝি সময়ে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমানকে ‘সিংহ পুরুষ’ সম্বোধন করে বিভিন্ন বিলবোর্ড, ব্যানার ও পোষ্টার সাঁটানো হতো।
একটি সূত্রে জানা যায়, পূর্বের থেকেই ব্যাপক আলোতি ছিলেন পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ। গাজীপুরের থাকাকালিন সময়ে সেই আলোচনার মাত্রা আরও বেড়ে যায়। এছাড়া পুলিশ সুপার হিসেবে নারায়ণগঞ্জে যোগদানের পর থেকে একের পর এক ক্ষমতাসীন দলের বিতর্কীত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে জেলা জুড়ে আলোচিত হয়ে উঠেন হারুন অর রশীদ।
জেলা পুলিশ সুপার নারায়ণগঞ্জে আসার পর ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসী মীর হোসেন মীরু, শাহ আলম গাজী টেনু, সাবেক কাউন্সিলর কামরুল হাসান মুন্না, বর্তমান কাউন্সিলর কবীর হোসাইন, আব্দুল করিম বাবু ওরফে ডিস বাবু, মোফাজ্জল হোসেন চন্নু, দৌলত মেম্বার। এরা প্রায় সকলেই প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের লোকজন হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও জেলার চিহ্নিত ভূমিদস্যু জয়নাল আবেদীনকেও গ্রেফতার করা হয়।
এদের গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে ব্যাপক ভাবে আলোচিত হন পুলিশ সুপার। আটকদের ছাড়াতে নানা ধরনের চাপ ও তদবির তিনি অগ্রাহ্য করেন । ফিরিয়ে দেন প্রভাবশালী অনেককেই। স্পষ্টত সবাইকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, ‘আমরা অপরাধীদের গ্রেফতার করেছি। আপনারা আদালত থেকে আইনী লড়াইয়ে ছাড়িয়ে নিন। আমাদের কাজ আমাদের করতে দিন’।
এদিকে নারায়ণগঞ্জে এসেই পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ জানিয়েছিলেন, তিনি কোনো সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যু, মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজকে ছাড় দিবেন না। সে লক্ষ্যে তিনি ব্যাপক অভিযান চালান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো নগরীর জুয়ার আসর এবং পাগলার মেরি এন্ডারসনের বার।
সূত্র বলছে, পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ শুধু অভিযানই নয়, এর পাশাপাশি প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সন্তান সাংসদ শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়েও ১৬টি সুনির্দিষ্ট বিষয় চিহ্নিত করে একটি অভিযোগপত্র দিয়েছেন। যা ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে।
এ দিকে সন্ত্রাস, মাদক, জুয়া, চাঁদাবাজি এবং ভূমিদস্যুতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানসহ নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়ক সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত হকারমুক্ত রাখায় সাধারণ মানুষ এসপি হারুনের প্রতি যারপরানাই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, জেলাতে হারুন অর রশীদের মতো পুলিশ সুপার ভীষণ দরকার। তিনি এখানেই থাকুক দীর্ঘদিন। আর তাহলে জেলার সন্ত্রাসী কমবে। তিনি মাদক নির্মূল করছেন। এখন অনেক মাদক ব্যবসায়ী আত্নগোপনে চলে গেছে।